"চোখ যে মনের কথা বলে!" শুধু আমিই বুঝতাম না সে কথামালা। আমি চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারতাম না। কথাগুলো অস্পষ্ট লাগত। কথা সম্পূর্ণ বুঝতে ঠোঁট নাড়া দেখতাম।
অপরাজিতার ঠোঁটে এক অদ্ভুত মায়া। সেদিনের সেই রক্তাভ চুম্বনের স্বাদ আজও ঠোঁটে লেগে আছে। আমার চোখ-প্রীতি শুরু সেদিন থেকেই।
আমি শিল্পী কিনা যানিনা, তবে ছবি আঁকতে প্রচন্ড ভালো লাগে। আমার প্রেম ছিল এই ছবিগুলো। কোন এক বরষায় প্রেম হিসেবে আরেকজন জুটেছিল আমার হৃদয়ে; আমার অপরাজিতা। জানালা দিয়ে বরষাস্নাত ঢাকার রুপ দেখছিলাম আর তুলির আঁচড় কাটছিলাম ক্যানভাসে। প্রকৃতির ক্যানভাস পূর্ণ করতে বিপরিত ছাদে চলে আসল এক তরুণী। উদ্দাম বৃষ্টিতে উদ্দাম নৃত্যে রত সে। সে এক অপরুপ দৃশ্য। প্রকৃতির সাথে প্রকৃতর মেলবন্ধন।
কোন এক সন্ধ্যায় বলেছিলাম ভালবাসি তোমায়। ফিরিয়ে দিয়েছিল সে কোন এক "বয়ফ্রেন্ডের" অজুহাতে। দমে যাইনি আমি। চেষ্টা করে গেছি তাকে পাবার। চেষ্টা করেছি তার শেষ মুহূর্ত অব্দি। অন্য প্রেমে মত্ত তরুণী, ব্যার্থ আমি। আমিতো ব্যার্থ হতে পারিনা। আমার না হলে কারো হতে দেব না তাকে। উত্তরে সে থুতু দিয়েছিল আমার উপরে। হা হা, আমার বন্দিনী আমার রাজত্বে আমার উপরেই আক্রমণ! ছুড়ি দিয়ে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিলাম তলপেট। কি দুর্ভাগ্য! হাত বাঁধা থাকায় তীব্র ব্যাথায়ও চেপে ধরতে পারছেনা আক্রান্ত স্থান। কি দরকার ছিল আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের।
সেদিন তার চোখের আকুতি আমার দৃষ্টি এড়ায়নি। কি মায়াময়, অথচ ভয়ার্ত সে চোখ! আমি সেই প্রথম কারো চোখের প্রেমে পড়লাম। আমি শিল্পী, তুলিতে প্রাণ দিলাম নিস্প্রভ চোখের- রক্ত রঙে।
মনটা কেমন যেন উশখুশ করত সারাদিন। অপরাজিতার সেদিনের চোখ প্রতিনিয়ত টানত আমায়। ছবির চোখে তাকিয়ে রই সারাদিন। ছবির চোখ কতদিন! আসল চোখ দেখতে মনে চায় আবার।
শরীর বিক্রি করা সুরমা নামের মেয়েটি এসেছিল তার রাজপুত্রের জন্য কিছু অন্ন সন্ধানে। আমি তার মাঝে সন্ধান পেয়েছিলাম সেই প্রিয় ছবির। মৃত্যুমুহুর্তে বিমূর্ত অক্ষিরুপ। গলাটিপে মেরেছিলাম তাকে। দেখেছি তার বড় বড় চোখের চাহনি। কি মধুর সে দৃশ্য!
গাড়ির দরজার ওপাশে ফুল বিক্রি করত যে মেয়েটি, তুলে নিয়েছিলাম তাকেও। দেখতে চেয়েছি ধর্ষণে আক্রান্ত চোখের রুপ! হত-বিহব্বল ভয়ার্ত সে চোখের আনন্দ পিছনে ফেলে দেয় পুরুষাঙ্গের সে সুখকে।
কিছুদিন আগে শুনলাম বজ্রপাতে একজন নিহত হওয়ার খবর। আমার ইচ্ছা হল, বজ্রপাতে না হোক অন্তত ইলেক্ট্রিক শকে মৃত্যুপথযাত্রী চোখ দর্শনের। রতন নামের চায়ের দোকানের ছেলেটি কেন দোকানে যায় না তা সবাই না জানলেও আমি জানি। তার সেই জ্বলন্ত নীল চোখ ছবি হয়ে আছে আমার ক্যানভাসে।
আমি বসে আছি সেই ঘরে, যেখানে গোটা শতেক চোখ অপরুপ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার পানে। অপরাজিতার রক্তিম চোখ সবার মাঝে অতুলনীয় । সে চোখে ভয় ছাড়াও করুণা দেখতে পাচ্ছি কি!
No comments:
Post a Comment