প্রেম-প্রতিহিংসা - Tanjib's Log

Tanjib's Log

Tanjib's Log

Recent

প্রেম-প্রতিহিংসা

Broken Glass
: কি ব্যাপার, ফোন ধরতে এত সময় লাগল কেন?
  : এই একটু ওয়াশরুমে ছিলাম।
: এখন কি করছ?
  : এই যে, তোমার সাথে কথা বলছি।
: শব্দ হচ্ছে কিসের? কোন ঝামেলা?
  : না, টিভি দেখছি।
: বাবা-মা বাসায় নেই!
  : না, শপিং এ গেছে।
: আসব নাকি!
  : যাহ দুষ্ট! মাইর দিব… আহ…
: এই কি হল? হ্যালো. হ্যালো..

যাক বাঁচা গেল। মনে ভয়-হিংসা-আনন্দ নিয়ে গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছি এই বর্ষার ঢাকায়।

পরেরদিন পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় তার ছবি দেখলাম। নাহ! ঠিক তার ছবি বললে ভূল হবে। এই ছবি দেখে তার সুন্দর চেহারার কিছুই অনুমান করা সম্ভব নয়। মাথাটা বোধহয় থেঁতলে গেছে, ঝাপসা করে দেয়া। পা একটা হাঁটু থেকে আলাদা হয়ে গেছে। পরনে ছিল গত পরশু আমার দেয়া কামিজ। লাল রঙের জামায় রক্তের কালচে ছাপ স্পষ্ট। এর সাথে থেঁতলানো মাথা দেখলে আরো অপূর্ব লাগতো বোধ হয়। কি হিংস্র হয়ে গেছি আমি! পত্রিকার শিরোনাম “বেপরোয়া গাড়ির শিকার তরুণ-তরুণী”।
তরুণের ছবি দেখতে পেলাম না পত্রিকায়।
“গতকাল বিকেল আনুমানিক ৪:৩০টার দিকে একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় প্রাণ হারায় কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী, তার সহযাত্রী তরুণ এবং বহনকারী রিক্সাওয়ালার অবস্থা আশংকাজনক। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ’তে রাখা হয়েছে। ঢাকা চিড়িয়াখানা রোডে রিক্সায় যাওয়া অবস্থায় পিছনে বাম পাশ থেকে ওভারটেকিং এর সময় গাড়িটি তাদের ধাক্কা দেয় এবং অতিদ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এই ঘটনায় মিরপুর শাহ আলি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।…”
রিক্সাওয়ালা বেচারার জন্য মায়া লাগছে। কি আর করার; পরিস্থিতির শিকার। আজ কলেজ থেকে নিরাপদ সড়কের জন্য মানববন্ধনের আয়োজন করা হচ্ছে, এখন সেই দিকেই যাচ্ছি।

গতকাল রাতে ঘুম হয়নি। আমি কী করলাম, কী করা উচিৎ ছিল, কী করব এসব নিয়ে ভেবে ভেবেই রাত কেটে গেল। বন্ধু-বান্ধব অনেকে সান্ত্বনা দিয়েছে। করুণ মুখ করে কান্নার অভিনয় করে গেছি।
তার সাথে আমার পরিচয় মাস চারেক আগে, প্রেম ২ মাস হল। বড় ভালবেসেছিলাম! ছিলাম, এখন আর বাসি না। ঘৃণা, শুধু ঘৃণাই তার জন্য।
গতকাল চাচার গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। চিড়িয়াখানার মোড় ঘুরতেই দেখি সে আরেকটি ছেলের হাত ধরে ছাতা মাথায় দিয়ে রিক্সা খুঁজছে। সম্ভবত এই বৃষ্টিতে চিড়িয়া দেখতে এসেছিল! গাড়িটা স্থির করলাম আরেকটু নিশ্চিত হতে। হ্যাঁ, নিশ্চিত হতেই মাথায় রক্ত চড়ে উঠল এবং অতি দ্রুতই পরিকল্পনাটা করে ফেললাম। মাথা যথেষ্ট ঠান্ডা করে সুযোগের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে রইলাম; মাছরাঙা যেমন মাছ শিকারের অপেক্ষায়। সুযোগ বুঝে ফোন দিলাম তাকে। তার মিথ্যা আমাকে আরও উদ্বুদ্ধ করল কাজটা ঘটাতে। সুযোগ বুঝে কাজটা ঘটিয়ে বামে মোড় নিয়ে পগার পার।
ভয় হচ্ছিল যদি ধরা পরে যাই! ঢাকার বৃষ্টি আমায় সাহায্য করল। রাস্তার পানি - বৃষ্টির পানি ধুয়ে দিল গাড়ির রক্তের দাগ। আমি নিশ্চিন্ত হলাম; পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হলাম কি! তার দুর্ঘটনার পূর্বমুহূর্তে আমার ফোন ছিল। ফোন ট্র‍্যাক করলে সহজে যে কেউ বুঝে যাবে তখন ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম এবং গাড়ির স্পিডের সাথে সাথে আমার ফোনও স্থান পরিবর্তন করেছিল। তবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কেউ এত থরো ইনভেস্টিগেশন করবে বলে মনে হয় না। কত স্বপ্নের জাল ছিঁড়ে যায় এই সড়কে, কেইবা তার খবর রাখে!

No comments:

Post a Comment