আবুলের মন খারাপ। পেটে ভাত নাই তার জন্য না। মন খারাপ কারণ আজ এক মাস হতে চলল সে জুতা চুরি করতে পারে নি। কি এক গযব দিয়েছেন আল্লাহপাক, মানুষজন মসজিদে যেতে পারে না। আর আবুল পারে না জুতা চুরি করতে।
আল্লাহকে আবুল ভয় করে না, তা না। আবুলের মনে হয়, 'মানুষ দুনিয়ায় আইছ খালি পায়ে, আল্লাহর কাছে নামাজেও যাবি খালি পায়ে আবার কবরেও যাবি খালি পায়ে। তাইলে তোর মসজিদের বাইরে জুতা পইর্যা ফুটানি দ্যাখান লাগবে ক্যান!' দুনিয়ার বুকে দম্ভ করে চললে নাকি কবরে শাস্তির আশংকা আছে। সেক্ষেত্রে একদিক থেকে আবুল মসজিদগামীদের শুভাকাঙ্ক্ষীই বটে। আবুলের চুরির জুতা চালান করার এক বিশ্বস্ত হকার আছে গুলিস্তানে। তার নাম মজিদ। লোকে তাকে মজিইদ্যা বলে ডাকলেও আবুল তাকে যথেষ্ট সম্মান করে। প্রথম যেদিন আবুল বায়তুল মোকাররম থেকে একজোড়া বাটার নতুন জুতা সরিয়েছিল, সেদিন মজিদ তাকে চুরি করতে দেখে ফেলে। আবুলের পিছনে এসে তাকে খপ করে ধরে ফেলে। গল্পে অনেকে লেখে অতিরিক্ত ভয় পেলে নাকি শিড়দাঁড়া বেয়ে শিতল পানির স্রোত নেমে যায়, তবে আবুল টের পেল তার পেটে মোচড় দিয়ে উঠেছে। পেটের চিন্তা সারাদিন যার মাথায় ঘোরে তার পেট মোচড় দেবে এটাই স্বাভাবিক। মজিদ তাকে হাত ধরে স্টেডিয়ামের গেটে নিয়ে আসল। জিজ্ঞেস করল, এ লাইনে কতদিন। যখন বুঝল এ নতুন মাল, তখন সে আবুলকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নিল। এ চত্ত্বরে সিন্ডিকেটের অভাব নেই। ছেলেপুলে যার বেশি তার আয়ও বেশি। এতক্ষণ ভয় পেলেও এক্ষণে আবুল নিশ্চিন্তে মজিদের ছায়াতলে আশ্রয় নিল। আর চোরাই জুতা বিক্রির চিন্তা থেকেও মুক্তি পেল। আবুল তাকে বলল, "ভাইজান, আপনে আমার মা-বাপ। আমারে ধোলাই দিবেন না, পিঠে কিঞ্চিৎ ব্যাথা আছে। আমার জুতা আপনার হাতেই দিব। যদি না দেই তবে আপনার জুতা খাই।" মজিদ বলল, "ভাই বলবি না বাপ বলবি আগে ঠিক কর হারামজাদা। তোরে আমার দোকানে চাকরি দিলাম। তুই হবি আমার কারিগর। আমি তোর মালিক। স্যার বইল্যা ডাকলে জুতসই হইবে।" আজীবন মজিইদ্যা ডাক শুনে অভ্যস্ত মজিদ নিজেও সংশয়ে ছিল আদৌ কেউ তাকে স্যার বলবে কিনা। তাই কথার মাঝখানে স্যার উল্লেখের সময় তার গলা কিছুটা কাঁপছিল।
আবুল বাইতুল মোকাররমের বাইরে শুয়ে আছে আর ভাবছে তার সোনালী অতিতের কথা, যখন দিনে ১০-১২ জোড়া জুতা চুরির রেকর্ডও সে করেছে। এমন সময় এক সাংবাদিক গাড়ি মসজিদের সামনে এসে থামল। আবুলকে উঠিয়ে সাংবাদিক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, "আপনার মাস্ক কোথায়?" কি মুসিবত! আগে গ্রামে থাকতে কোন মেয়েকে "কী রে রোজা রাখস নাই ক্যান?" জিজ্ঞেস করে সে ব্যাপক পৈশাচিক আনন্দ পেত। আর ইদানিং সবাই আনন্দ পায় মুখখোলা কাউকে, "মাস্ক পরস নাই ক্যান?" জিজ্ঞেস করে। আবুল মিচকা হাসি দিয়ে বলল, "মাস্ক পইর্যা শুইছিলাম, কোন ব্যাক্কলে যেন চুরি কইর্যা নিয়া গ্যাছে ষাড়।" আবুল স্যার উচ্চারণ করতে পারে না এটা ঠিক না। ভদ্রগোছের কাউকে অপমান করার যোগ্যতা আল্লাহপাক তাকে দেয় নাই। এইজন্য কাউকে সামনা-সামনি গালি দিতে চাইলে সে ষাড় বলে সম্বোধন করে। এতে যদিও চন্দ্রবিন্দুর অভাব থাকে, তাতে ব্যাকরণ না জানা আবুলের কিছু আসে যায় না। সাংবাদিক ভদ্রলোক ক্যামেরাম্যানকে 'কাট' বলে প্রস্থান করল।
- কিরে আবুইল্যা কথা কিছু শুনছস নাকি?
- কি কথা স্যার?
- তোর কামের দিন আইয়া পরছে।
- বলেন কি স্যার!
- সারাদিন মটকা মাইরা থাকলে হইবে? দেশের খবর কিছুতো রাখস না। ঈদের দিন বায়তুল মোকাররমে জামাত হইবে ৫-৬ টা। প্রত্যেক জামাত দিয়া কম কইর্যা হইলেও ৩-৪ জোড়া ঘাই মারবি।
ঈদের জামাতের কথা শুনে আবুলের চোখ চকচক করে উঠল, দু'ফোঁটা পানিও জমলো বোধহয় চোখের কোণে। আনন্দাশ্রু বোধহয় একেই বলে। স্রষ্টার উদ্দেশ্যে শেষ কবে আবুল মসজিদে গেছে তা তার মনে নেই। আজ সে যাবে, অবশ্যই যাবে। জামাত না থাকুক, বারান্দায় বসে সূরা-ক্বেরাত ছাড়াই সে দু'রাকাত নামাজ পরবে; শোকরানা নামাজ। আলস্যের দিন শেষ হয়ে এলো বলে।
আল্লাহকে আবুল ভয় করে না, তা না। আবুলের মনে হয়, 'মানুষ দুনিয়ায় আইছ খালি পায়ে, আল্লাহর কাছে নামাজেও যাবি খালি পায়ে আবার কবরেও যাবি খালি পায়ে। তাইলে তোর মসজিদের বাইরে জুতা পইর্যা ফুটানি দ্যাখান লাগবে ক্যান!' দুনিয়ার বুকে দম্ভ করে চললে নাকি কবরে শাস্তির আশংকা আছে। সেক্ষেত্রে একদিক থেকে আবুল মসজিদগামীদের শুভাকাঙ্ক্ষীই বটে। আবুলের চুরির জুতা চালান করার এক বিশ্বস্ত হকার আছে গুলিস্তানে। তার নাম মজিদ। লোকে তাকে মজিইদ্যা বলে ডাকলেও আবুল তাকে যথেষ্ট সম্মান করে। প্রথম যেদিন আবুল বায়তুল মোকাররম থেকে একজোড়া বাটার নতুন জুতা সরিয়েছিল, সেদিন মজিদ তাকে চুরি করতে দেখে ফেলে। আবুলের পিছনে এসে তাকে খপ করে ধরে ফেলে। গল্পে অনেকে লেখে অতিরিক্ত ভয় পেলে নাকি শিড়দাঁড়া বেয়ে শিতল পানির স্রোত নেমে যায়, তবে আবুল টের পেল তার পেটে মোচড় দিয়ে উঠেছে। পেটের চিন্তা সারাদিন যার মাথায় ঘোরে তার পেট মোচড় দেবে এটাই স্বাভাবিক। মজিদ তাকে হাত ধরে স্টেডিয়ামের গেটে নিয়ে আসল। জিজ্ঞেস করল, এ লাইনে কতদিন। যখন বুঝল এ নতুন মাল, তখন সে আবুলকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নিল। এ চত্ত্বরে সিন্ডিকেটের অভাব নেই। ছেলেপুলে যার বেশি তার আয়ও বেশি। এতক্ষণ ভয় পেলেও এক্ষণে আবুল নিশ্চিন্তে মজিদের ছায়াতলে আশ্রয় নিল। আর চোরাই জুতা বিক্রির চিন্তা থেকেও মুক্তি পেল। আবুল তাকে বলল, "ভাইজান, আপনে আমার মা-বাপ। আমারে ধোলাই দিবেন না, পিঠে কিঞ্চিৎ ব্যাথা আছে। আমার জুতা আপনার হাতেই দিব। যদি না দেই তবে আপনার জুতা খাই।" মজিদ বলল, "ভাই বলবি না বাপ বলবি আগে ঠিক কর হারামজাদা। তোরে আমার দোকানে চাকরি দিলাম। তুই হবি আমার কারিগর। আমি তোর মালিক। স্যার বইল্যা ডাকলে জুতসই হইবে।" আজীবন মজিইদ্যা ডাক শুনে অভ্যস্ত মজিদ নিজেও সংশয়ে ছিল আদৌ কেউ তাকে স্যার বলবে কিনা। তাই কথার মাঝখানে স্যার উল্লেখের সময় তার গলা কিছুটা কাঁপছিল।
আবুল বাইতুল মোকাররমের বাইরে শুয়ে আছে আর ভাবছে তার সোনালী অতিতের কথা, যখন দিনে ১০-১২ জোড়া জুতা চুরির রেকর্ডও সে করেছে। এমন সময় এক সাংবাদিক গাড়ি মসজিদের সামনে এসে থামল। আবুলকে উঠিয়ে সাংবাদিক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, "আপনার মাস্ক কোথায়?" কি মুসিবত! আগে গ্রামে থাকতে কোন মেয়েকে "কী রে রোজা রাখস নাই ক্যান?" জিজ্ঞেস করে সে ব্যাপক পৈশাচিক আনন্দ পেত। আর ইদানিং সবাই আনন্দ পায় মুখখোলা কাউকে, "মাস্ক পরস নাই ক্যান?" জিজ্ঞেস করে। আবুল মিচকা হাসি দিয়ে বলল, "মাস্ক পইর্যা শুইছিলাম, কোন ব্যাক্কলে যেন চুরি কইর্যা নিয়া গ্যাছে ষাড়।" আবুল স্যার উচ্চারণ করতে পারে না এটা ঠিক না। ভদ্রগোছের কাউকে অপমান করার যোগ্যতা আল্লাহপাক তাকে দেয় নাই। এইজন্য কাউকে সামনা-সামনি গালি দিতে চাইলে সে ষাড় বলে সম্বোধন করে। এতে যদিও চন্দ্রবিন্দুর অভাব থাকে, তাতে ব্যাকরণ না জানা আবুলের কিছু আসে যায় না। সাংবাদিক ভদ্রলোক ক্যামেরাম্যানকে 'কাট' বলে প্রস্থান করল।
- কিরে আবুইল্যা কথা কিছু শুনছস নাকি?
- কি কথা স্যার?
- তোর কামের দিন আইয়া পরছে।
- বলেন কি স্যার!
- সারাদিন মটকা মাইরা থাকলে হইবে? দেশের খবর কিছুতো রাখস না। ঈদের দিন বায়তুল মোকাররমে জামাত হইবে ৫-৬ টা। প্রত্যেক জামাত দিয়া কম কইর্যা হইলেও ৩-৪ জোড়া ঘাই মারবি।
ঈদের জামাতের কথা শুনে আবুলের চোখ চকচক করে উঠল, দু'ফোঁটা পানিও জমলো বোধহয় চোখের কোণে। আনন্দাশ্রু বোধহয় একেই বলে। স্রষ্টার উদ্দেশ্যে শেষ কবে আবুল মসজিদে গেছে তা তার মনে নেই। আজ সে যাবে, অবশ্যই যাবে। জামাত না থাকুক, বারান্দায় বসে সূরা-ক্বেরাত ছাড়াই সে দু'রাকাত নামাজ পরবে; শোকরানা নামাজ। আলস্যের দিন শেষ হয়ে এলো বলে।
No comments:
Post a Comment