কীর্ত্তনখোলায় আঁধারে - Tanjib's Log

Tanjib's Log

Tanjib's Log

Recent

কীর্ত্তনখোলায় আঁধারে

DJ Chanachurwala

সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই, নদীর পাড়ে বসে আছি। নদীর নাম কীর্তনখোলা। কীর্তনখোলার কীর্তন উৎসব না দেখলেও অধুনা রাঁধা-কৃষ্ণলীলা ঢের দেখেছি। নদীর এ দিকটাতে আগে অনেক আসতাম; কখোনো ঘুরতে, কখোনো-বা স্কুল পালিয়ে। আজ বহু বছর পরে এলাম। চারদিকে নতুনত্বের ছোঁয়া। নদীপাড় ভরাট করে বেড়িবাঁধ দেয়া হয়েছে, সেটাকে হাঁটার জন্য উপযুক্ত করা হয়েছে। পাশে সারি সারি ঝাউ গাছ। ভ্রাম্যমাণ ফুডকার্ট যুক্ত হয়েছে আগন্তুকদের ভুড়ি-রঞ্জণের জন্য। আমি বসে আছি একদম শেষদিকে যেখানে শুরু হয়েছে একটি খালের যাত্রার।
আমি সন্ধ্যা দেখছি, দেখছি নদী কিংবা নারী। আরো দেখছি একজনকে, সং সেজে চানাচুর বিক্রি করছে। কাঁধে ঝোলানো চানাচুরের সরঞ্জাম, সাথে একটা সাউন্ড বক্সও রয়েছে। ডিজে সাউন্ড বাজছে ডিজে চানাচুরওয়ালার সাউন্ডবক্স থেকে। ছেলেটি একবার এদিকটায় আসছে আবার হাঁটতে হাঁটতে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। আমি লক্ষ্য করলাম ছেলেটি আমার কাছাকাছি যখন আসছে আমার চোখে চোখ পড়তেই থতমত হয়ে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বারেবার। প্রথমে ভাবছিলাম এমনিতেই চানাচুর বিক্রির জন্য বোধহয়। পরে বুঝলাম, না, এর অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কাছে ডাকলাম ও'কে। নাঃ ও কাছে আসল না। না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে দূরে, দূরে কীর্ত্তনখোলার তীর ঘেঁষে হেঁটে চলা অভিযাত্রীর পানে।
আমার কৌতূহলি মন। কৌতূহল সেদিনও জেগেছিল, যেদিন তার গালে গভীর চুম্বনের রক্তাভ দাগ দেখেছিলাম। প্রথম বাসরের চিহ্ন আড়াল করে বলেছিল মশার কামড়ের দাগ মনে হয়। বলেছিল তাকে ভুলে যেতে। আমি অবাক হয়েছিলাম তার কথায়, পরে জেনেছিলাম তার প্রণয় উপাখ্যান; কীর্ত্তনখোলার তীরে লুকানো যায় না কিছুই।
পিছু নিলাম ডিজে চানাচুরওয়ালার। একসময় ধরে ফেললাম তাকে।
-   ১০ টাকার চানাচুর দাও।
কোন কথা না বলে সে চানাচুর বানাতে শুরু করল। তার চোখের চাহনিতে অস্বস্তির ভাব স্পষ্ট। আমি হঠাৎ তার মুখোশে টান দিয়ে খুলে ফেললাম।
অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি, বহু দিনের পরিচিত সে মুখের পানে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার পুরোনো বন্ধু কিংবা শত্রু রাসেল।                                
-   তুই! 
-   হ্যাঁ, আমি। আমি রাসেল, তোর অভিশাপ নিয়ে বেঁচে আছি এখনো।
-   না, তোর প্রতি আমার আর কোন অভিযোগ নেই। কেমন আছিস তোরা?
-   দেখতেই পাচ্ছিস। চানাচুর বেঁচে পেট চালাই, ভাল আছি। আমাদের ছেলে রাকিব এখন হাই-স্কুলে পড়ে, সেই নূরিয়া স্কুলে।
-   রুপা কেমন আছে?
-   যে সুখ তোর কাছে পেত সে সুখ হয়তো ও'কে দিতে পারিনি।
-   কেন কেড়ে নিলি ওকে অনেক জানতে ইচ্ছে করত একসময়।
-   যেদিন দুই পাষণ্ড ওর সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছিল, সেদিন আমি পারিনি ওকে একলা ছেড়ে দিতে। ও চেয়েছিল সবার থেকে দূরে সরে যেতে। তাই ফিরিয়ে দিয়েছিল তোর ভালবাসা।
আমার ঘোর কাটেনি তখনও। এ আমি কি শুনলাম! ও কি পারতনা আমায় সব খুলে বলতে? আমি তো ওকে ভালবাসতাম। ভালবাসার সম্মান দিতে আমি কি পারতাম না! আমার বিস্ময় আরো বাড়িয়ে দিতে রাসেল বলল-
-   জানিস, আমাদের মধ্যে এখনো শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। আমি ওকে তোর মত ভালবাসা না দিতে পারলেও আমার সমস্তটুকু দিয়ে ভালবেসেছি।
আমায় হতবিহ্বল- ছলছল চোখে রেখে রাসেল হেঁটে চলেছে, চলছে ডিজে চানাচুরওয়ালা। আমার চোখে ভাসছে রুপার গালের চুম্বনচিহ্ন, সেই রূপা; অনেকদিন আগে কীর্তনখোলায় পা ডুবিয়ে যে আমায় বলেছিল,"আমার পায়ে নুপুর পরাবি?" 
রুপার পায়ে নুপুর আছে কিনা বড় জানতে ইচ্ছে করে। বড় জানতে ইচ্ছে করে জীবন এলোমেলো করে দেয়া সে মানুষ কিংবা অমানুষদের ঘরে কোন প্রেয়সীর ছোঁয়া আছে কিনা।                         

No comments:

Post a Comment